ট্রাম্পের নোবেল স্বপ্ন ভঙ্গ, মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ, সমালোচকদের দাবি— শান্তির বদলে বিশ্বে অস্থিরতা বাড়িয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনীতদের তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও নোবেল কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কিছু ঘোষণা করেনি, তবুও বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলে গুঞ্জন চলছে। উল্লেখযোগ্য যে, প্রতিবছর হাজার হাজার প্রার্থী নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন, এবং যেকোনো সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তি কাউকে মনোনীত করতে পারেন। তাই কেবল মনোনয়ন পাওয়া কোনো বিশেষ অর্জন নয়।
ট্রাম্পের নাম তালিকায় ওঠার পেছনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনার জন্ম হয়েছে। তারা তাকে শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছিল, তবে এর কূটনৈতিক তাৎপর্য যথাযথভাবে অনুধাবন করা হয়নি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ভারতের পক্ষ থেকেও বারবার স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বা “অপারেশন সিন্দুর”-এর পরবর্তী প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা ছিল না।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে নানা জটিলতা এ আলোচনায় যুক্ত হয়েছে। ভারতের “অপারেশন সিন্দুর”-এর সময় পাকিস্তানের ভেতরে মার্কিন সামরিক স্থাপনা, বিশেষ করে গোপন পারমাণবিক সংরক্ষণাগার এবং নূরখান বিমানঘাঁটি নিয়ে যে অভিযোগ ওঠে, তা দুই দেশের সম্পর্কে সন্দেহের আবহ তৈরি করে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পারমাণবিক ও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায়ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নাম উঠেছে—যদিও এসব অভিযোগ প্রমাণিত নয়। ভিক্রম সারাভাইসহ কয়েকজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর থেকেই ভারতে এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এসব ঘটনাই ভারতের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টার ইঙ্গিত বহন করে।
সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প বরং আন্তর্জাতিক শান্তির পরিবর্তে বিভাজন ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইসরায়েল, রাশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতগুলো থামাতে ব্যর্থ হন। এমনকি, এক সময় গ্রিনল্যান্ড আক্রমণের প্রস্তাবও দিয়ে আলোচনায় আসেন। পরে তিনি শান্তি পুরস্কার দাবি করে বসেন, যা সমালোচকদের কাছে আত্মসচেতনতার অভাবের প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও এ নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য হচ্ছে। অনেক আমেরিকান কৌতুক করে বলছেন, ইলন মাস্কের চাঁদে নামার সম্ভাবনা যতটা, তার চেয়ে কম সম্ভাবনা ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার। সমালোচকদের মতে, যারা ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন বা এ জন্য সওয়াল করেছেন, তারাই বরং নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন।
সম্প্রতি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা পিটার নাভারো ভারতের অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া থেকে ভারতের ছাড়কৃত দামে তেল কেনা ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর অর্থ যোগাচ্ছে এবং এর ফলে আমেরিকান জনগণকেও অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। তিনি এমনকি প্রস্তাব দেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫% শুল্ক ছাড় পেতে পারে। নয়াদিল্লি এ বক্তব্যকে উসকানিমূলক হিসেবে দেখছে এবং ভারতের সার্বভৌম সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণায় বারবার বলা হয়েছে—“এটি যুদ্ধের যুগ নয়” এবং ভারত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে নিজের প্রয়োজনমতো বাণিজ্য চালিয়ে যাবে।
এদিকে চীন ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি হিসেবে অগ্রসর হওয়ায়, ওয়াশিংটনের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ভান করলেও, প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লির অগ্রগতি থামাতে চায়—এমন মতও অনেকের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কূটনৈতিক নীরব প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প আরও বিরক্ত হয়েছিলেন বলে ধারণা রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—ট্রাম্প কি আদৌ কখনো নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন? অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, তিনি বিশ্বে শান্তির পরিবর্তে অস্থিরতা ছড়িয়েছেন, এবং তার নাম এই পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটাই আসলে পুরস্কারের মর্যাদার জন্য একটি অবমাননা।
বর্তমানে জার্মানিতে অর্থনীতি বিষয়ক নোবেল বিজয়ীদের একটি সম্মেলন চলছে। সেই উপলক্ষে আবারও ট্রাম্পের নোবেল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, কারণ তিনি বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন যে তিনি একদিন এ পুরস্কার পেতে চান। তবে সর্বশেষ গুঞ্জন বলছে, চলতি বছর তার নাম মনোনয়ন তালিকা থেকেও বাদ পড়েছে।