ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ ২০২৫: পুলওয়ামা থেকে যুদ্ধবিরতি

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ ২০২৫: পুলওয়ামা থেকে যুদ্ধবিরতি

একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময়ের কাহিনি

বাংলা দেহাতি: 11th May 2025

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে একটি নতুন উত্তেজনার সূচনা করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদকে দায়ী করে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথম এ ধরনের হামলা। পাকিস্তান প্রতিশোধমূলক বিমান হামলা চালায় এবং একটি ভারতীয় মিগ-২১ বিমান ভূপাতিত করে, পাইলট অভিনন্দন বর্ধমানকে বন্দী করে। আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান তাকে মুক্তি দেয়, এবং উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। এই ঘটনা ভবিষ্যতের সংঘর্ষের পটভূমি তৈরি করে।

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামের বাইসারান উপত্যকায় একটি ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলা ঘটে, যাতে ২৬ জন পর্যটক, একজন স্থানীয় মুসলিম এবং একজন খ্রিস্টান নিহত হন। দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যাকে ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা বলে মনে করে, প্রাথমিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করে, যদিও পরে তারা দাবি প্রত্যাহার করে। হামলাকারীরা হিন্দু পর্যটকদের লক্ষ্য করে, তাদের ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং ইসলামী কালিমা পাঠ করতে বলে। ভারত পাকিস্তানকে এই হামলার পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানায়।

২৩ এপ্রিল থেকে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ভারত ইন্দুস জলচুক্তি স্থগিত করে, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে, ভিসা সেবা বন্ধ করে এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তানও ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে, ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে এবং শিমলা চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দেয়। ২৪ এপ্রিল থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) সংঘর্ষ শুরু হয়, পাকিস্তান ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। ২৮ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ভারতীয় হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ৩০ এপ্রিল পাকিস্তান দাবি করে যে ভারত শীঘ্রই সামরিক পদক্ষেপ নেবে। ১ মে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেন, কোনো সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না। ৫ মে ভারত সাতটি রাজ্যে সিভিল ডিফেন্স ড্রিল ঘোষণা করে, যা ১৯৭১ সালের পর প্রথম।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমান ডিজিএমও হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই যিনি ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে এই পদ গ্রহণ করেন

৭ মে ভারত অপারেশন সিন্দুর নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ১৪টি মিসাইল হামলা চালায়, জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবার ক্যাম্প লক্ষ্য করে। ভারত দাবি করে, কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি। পাকিস্তান বলে, হামলায় ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়, মসজিদসহ বেসামরিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, হামলায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়। পাকিস্তান ১০ মে অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস নামে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়, ভারতের উত্তরাঞ্চলের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে। উভয় পক্ষের হামলায় ৬৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, কারণ সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসার কোনো দিক স্পষ্ট হয়নি। জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, এবং অনেকে মনে করছেন যে এই সংকটে ভারত কৌশলগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

১০ মে বিকেল ৩:৩৫-এ পাকিস্তানের ডিজিএমও মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ ভারতের ডিজিএমও জেনারেল রাজীব ঘাই সঙ্গে যোগাযোগ করে। মার্কিন মধ্যস্থতায়, ৩৬টি দেশের সমর্থনে, বিকেল ৫:০০ টায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এটি ঘোষণা করেন, যদিও ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এটি নিশ্চিত করেন। যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। ভারত পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে, পাকিস্তানি ড্রোন ও গোলাবর্ষণের কথা উল্লেখ করে। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ভারতের উপর লঙ্ঘনের দায় চাপায়। উভয় পক্ষ সীমান্তে সতর্ক থাকে, এবং ভারত ঘোষণা করে যে কোনো লঙ্ঘনের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমান ডিজিএমও হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই যিনি ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে এই পদ গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের ডিজিএমও হলেন মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ।

এই সংঘর্ষে কাশ্মীরের বাসিন্দারা ব্যাপক উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটায়। শ্রীনগরের রুমাইসা জান, যিনি বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যুদ্ধবিরতিকে স্বস্তির বিষয় বলে উল্লেখ করেন। মুজাফফরাবাদের বাসিন্দারা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির আশা প্রকাশ করেন। তবে, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গুর থাকে, এবং কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়। এই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য, ভিসা এবং জলচুক্তির মতো বিষয়গুলো স্থগিত থাকে, যা দুই দেশের সম্পর্কে গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

তবে, যুদ্ধবিরতি থেকে ভারত খুব কমই লাভ করেছে বলে মনে হয়। সন্ত্রাসী হামলা ও সীমান্ত উত্তেজনা কমেনি, এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়নি। ইন্দুস জলচুক্তি, বাণিজ্য এবং ভিসা সেবা স্থগিত থাকায় অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, কারণ সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসার কোনো দিক স্পষ্ট হয়নি। জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, এবং অনেকে মনে করছেন যে এই সংকটে ভারত কৌশলগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

Pak-India ceasefire: Turning point on the path to peace, Shehbaz thanks Trump. Bangla Dehati

Read More