পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৫৫: ভূমির অধিকার সংরক্ষণের নথি রক্ষণাবেক্ষণ

দেহাতি: 5th March 2025

ভূমির মালিকানা ও রেকর্ড সংশোধনের নিয়মাবলি

ভূমির নথি সংরক্ষণ ও হালনাগাদের গুরুত্ব

পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৫৫-র অধীনে ভূমির অধিকার (Record-of-Rights বা RoR) সংরক্ষণ ও হালনাগাদ করার বিধান রয়েছে, যা রাজ্যের ভূমি মালিকানা, কৃষিজমির ব্যবহার ও অধিকার সংরক্ষণে সহায়ক। অধিকার সংরক্ষণের রেকর্ড (RoR) মূলত জমির প্রকৃত মালিক কে, ভূমির ধরন কী, জমি কীভাবে চাষ করা হচ্ছে—এইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে।

ভূমির অধিকার সংরক্ষণের রেকর্ড (ধারা ৫০)

আইন অনুযায়ী, সরকার-নিযুক্ত প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষকে গ্রামের ভূমি সংক্রান্ত রেকর্ড সর্বদা হালনাগাদ রাখতে হবে

নিম্নলিখিত কারণে ভূমির রেকর্ডে পরিবর্তন আনা হবে:
🔸 নামজারি (Mutation): জমির মালিকানা হস্তান্তর বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা পরিবর্তন।
🔸 বিনিময় বা সংহতকরণ: জমির ভাগাভাগি, বিনিময় বা সমবায় কৃষি প্রতিষ্ঠার ফলে পরিবর্তন।
🔸 নতুন বন্দোবস্ত (Settlement): নতুনভাবে জমি বন্দোবস্ত দিলে রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
🔸 রাজস্ব পরিবর্তন: ভূমি কর বা রাজস্বের পরিমাণ পরিবর্তন হলে তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
🔸 চাষের পদ্ধতির পরিবর্তন: যদি জমি বর্গাদার দ্বারা চাষ করা হয়, তাহলে রেকর্ডে তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
🔸 অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন: ভূমির রেকর্ডে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বা সংশোধন।

ভূমি রেকর্ড ডিজিটাল সংরক্ষণ ও সংশোধন (ধারা ৫০ (২))

কম্পিউটারাইজড ভূমি রেকর্ড:
যে সমস্ত জেলায় ভূমির রেকর্ড ডিজিটাল করা হয়েছে, সেখানে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংরক্ষণ করা হবে এবং কম্পিউটারাইজড কপি হালনাগাদ করা হবে

ডিজিটাল স্বাক্ষর ও প্রমাণীকরণ:
🔹 ভূমির ডিজিটাল রেকর্ডকে সঠিক ও মূল নথির সমতুল্য ধরা হবে
🔹 তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০ অনুযায়ী, ডিজিটাল স্বাক্ষরযুক্ত (Digitally Authenticated) রেকর্ডকে বৈধ বলে গণ্য করা হবে

নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে ধারা ৫০ প্রযোজ্য নয় (ধারা ৫০এ)

যেসব এলাকায় নতুন ভূমি রেকর্ড প্রস্তুতি (Chapter VIIA) চলছে, সেখানে ধারা ৫০ কার্যকর হবে না
তবে, চূড়ান্ত প্রকাশিত রেকর্ডের পর, সংশ্লিষ্ট জমির রেকর্ডের যে কোনো পরিবর্তন ধারা ৫০-এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে

ভূমি রেকর্ড সংশোধন (ধারা ৫০বি)

রাজ্য সরকার যখন প্রয়োজন মনে করবে, তখন সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধনের নির্দেশ দিতে পারবে

সংশোধনের ধাপ:
🔸 সংশ্লিষ্ট রেকর্ড থেকে অপ্রয়োজনীয় বা বাতিলকৃত তথ্য মুছে ফেলা হবে
🔸 সংশোধিত রেকর্ড সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে খসড়া আকারে প্রকাশ করা হবে এবং জনগণের আপত্তি গ্রহণ করা হবে।
🔸 আপত্তি নিষ্পত্তির পর, চূড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশ করা হবে এবং তা আইনি স্বীকৃতি পাবে

সংশোধিত রেকর্ডের বৈধতা:
🔹 সংশোধিত ও চূড়ান্ত প্রকাশিত ভূমি রেকর্ড আইনগতভাবে সঠিক বলে বিবেচিত হবে
🔹 সংশোধিত রেকর্ডের যে কোনো তথ্য চ্যালেঞ্জ করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শুনানির সুযোগ দেওয়া হবে

ভূমি রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত মামলাগুলোর নিষ্পত্তি (ধারা ৫০বি (৮))

🔸 যখন ভূমি রেকর্ড সংশোধন করা হয়, তখন কোনো দেওয়ানি আদালত সংশ্লিষ্ট রেকর্ড সংশোধন বা বাতিলের মামলা গ্রহণ করতে পারবে না
🔸 সংশোধিত রেকর্ড চূড়ান্ত প্রকাশের আগে যদি কোনো মামলা থাকে, তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে

ভূমি রেকর্ড সংরক্ষণ ও হালনাগাদের গুরুত্ব

পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৫৫-র অধীনে ভূমির অধিকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা ভূমি মালিকদের অধিকার রক্ষা ও কৃষি ব্যবস্থার স্থায়িত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করে

✔ ভূমি রেকর্ড সংরক্ষণ ও হালনাগাদ ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে সাহায্য করে।
✔ নামজারি, রাজস্ব পরিবর্তন, ও ভূমির চাষ পদ্ধতির পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।
✔ ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক হয়েছে।
✔ নতুন ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থার কারণে আদালতে মামলা পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা কমবে।

Read More

বর্গাদারদের অধিকার, ভূমি চাষের নিয়ম এবং ভূমি সংস্কারের মূল দিক (পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন, ১৯৫৫)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *