Date: 30th April 2025
২৫০ কোটির প্রকল্পে নির্মিত এই মন্দিরকে ঘিরে ধর্মীয় আবেগ, রাজনৈতিক বিতর্ক ও পর্যটনের সম্ভাবনা একসাথে মিশে গেল; বিজেপি বলছে ‘নকল’, তৃণমূল বলছে ‘নতুন দিগন্ত’।
অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্রতট দিঘায় জগন্নাথদেবের নামে নির্মিত একটি বিশাল মন্দিরের দ্বার উন্মোচন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মন্দির নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা, এবং এটি সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে HIDCO সংস্থার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীতে পুরীর ঐতিহাসিক জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে ডেকে আনা হয়েছিল প্রায় সব বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পীদের, অনুষ্ঠানটিকে একেবারে সাংস্কৃতিক মহোৎসবে পরিণত করা হয়েছিল। অপরদিকে, বিজেপি এই মন্দিরকে “অবৈধ” বলে দাবি করেছে। যদিও প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তার নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এবং তা নিয়ে দলের অন্দরেই মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্য অনুযায়ী সেখানে জগন্নাথদেবের প্রতিমা নির্মিত হয় নিমগাছ দিয়ে। দিঘার নতুন মন্দিরে প্রধান প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথরে । তবে রথযাত্রার জন্য অতিরিক্ত একটি নিম কাঠের মূর্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ISKCON কলকাতা এই মন্দিরের নিত্যপূজার দায়িত্ব নিচ্ছে, যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করেন, পুরীর বাইরেও জগন্নাথদেবের পূজার ব্যবস্থা করা এবং মন্দির নির্মাণ করাকে তাঁরা অনৈতিক বলেই মনে করেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে রয়েছে পুরী, যেখানে তিনি সন্ন্যাস জীবনে প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত জগন্নাথের সাথে একাত্ম হন।
বিজেপির বক্তব্য, দিঘাকে “ধাম” হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তা ধর্মীয় ঐতিহ্যের অপব্যবহার। তবে এই উদ্যোগ যে দিঘার পর্যটন শিল্পের জন্য একটি নতুন সংযোজন, সে কথা মানছেন অনেকেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এর নেতৃত্বে থাকায় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি তৃণমূল কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, বাংলার মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে দ্বিমত রয়েছে।
অনেকে মনে করেন, জগন্নাথদেব শুধুমাত্র পুরীতেই বিরাজ করেন এবং সেই ঐতিহ্য কোনো অনুকরণে প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। দিঘার এই মন্দির রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও, আপাতত তা পর্যটন দৃষ্টিভঙ্গিতে পশ্চিমবঙ্গকে একটি নতুন ঠিকানা দিয়েছে। মন্দিরটি পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। যদি দিঘার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়, তবে এই নতুন মন্দির এলাকার সামগ্রিক অর্থনীতি তাতে উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়।