ভগবদ্গীতার শিক্ষা: সনাতন ধর্ম ও জীবনের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা

Krishna

Date: 23rd April 2025

মানবতার আহ্বান: যুদ্ধের ময়দানে ভগবানের বাণী

“ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ পার্থ নৈতত্ত্ব্য্যুপপদ্যতে ।
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ ॥”
— ভগবদ্গীতা (২.৩)

এই এক শ্লোকেই নিহিত রয়েছে মানুষের অস্তিত্বের চরম সত্য, তার জীবনযুদ্ধের আদর্শ এবং তার কর্তব্যবোধের চিরন্তন দিশা। ভগবান কৃষ্ণ—যিনি কেবল যাত্রার সারথি নন, তিনি মানবজাতির গুরু, ধর্মের জীবন্ত উদাহরণ—তিনি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর প্রিয় শিষ্য অর্জুনকে। এই আহ্বান কেবল অর্জুনের প্রতি নয়, প্রতিটি মানুষের প্রতি; যারা কখনো না কখনো দুর্বলতায় ভেঙে পড়ে, মনের ভিতরে সংশয়ের কুয়াশায় হারিয়ে যায়।

“ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ”— দুর্বলতা নয়, বীরত্বই হোক তোমার পরিচয়।


ভগবান বলেন, হে পার্থ, তুমি যে রূপে জন্মেছ, যে ধর্মের ধারক, যে রাজশক্তির অধিকারী, তোমার জন্য কাপুরুষতা মানায় না। তোমার রক্তে প্রবাহিত হয়েছে ইক্ষ্বাকু রাজবংশের গৌরব, রামের আদর্শ, মনুর বিধান, পরশুরামের প্রতিজ্ঞা, বিশ্বামিত্রের তপস্যা, আদিত্যদের দীপ্তি ও রুদ্রদের প্রলয়-শক্তি। এই হলো সেই সনাতন ধর্ম, যার পেছনে রয়েছে শ্রুতি, ঋষিদের বাণী, এবং অনন্ত আকাশের নৈতিক উদ্ঘোষ।

“ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ”— হৃদয়ের ক্ষুদ্রতা ত্যাগ করো, দাঁড়াও।সনাতন ধর্ম ও জীবনের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা


ভগবান চান না আমরা পিছিয়ে যাই। তিনি চান আমরা দাঁড়াই—উন্নত মস্তকে, দৃঢ় সংকল্পে, অটল সাহসে। যারা ভীত, যারা দোষ চাপায় পরিস্থিতির ঘাড়ে, যারা নিজের দুর্বলতা আড়াল করতে নানান যুক্তির আশ্রয় নেয়, তারা কেবল সমাজের পেছনের সারিতে থাকে, ইতিহাস তাদের নাম মনে রাখে না। গীতা আমাদের শেখায়—অসত্য, অবিচার ও ধর্মবিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধই হলো পূর্ণ মানবজীবনের মূল ধর্ম।

“উত্তিষ্ঠ পরন্তপ”— ও অর্জুন, তুমি তো পরন্তপ, শত্রু-সংহারকারী, তোমার স্বভাবই লড়াই করা।


তুমি তো হিমালয়ের মতো অটল, তুমি তো সেই পুরুষ, যে অন্ধকারেও দৃষ্টিশক্তি হারায় না, যিনি নিরবতার মধ্যে শব্দ শুনতে পান, যিনি কুঁকড়ে না গিয়ে এগিয়ে যান।

ভগবানের এই আদেশ মানবজাতির প্রতি চিরন্তন আহ্বান। সনাতন ধর্ম শুধুমাত্র কোনো সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য এক নৈতিক নির্দেশিকা—যেখানে প্রতিটি সংকট এক একটি যুদ্ধ, প্রতিটি সঙ্কল্প এক একটি যজ্ঞ, আর প্রতিটি সংগ্রাম ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাওয়া এক মহাকাব্যিক দৃষ্টান্ত।

ভগবদ্গীতা আমাদের আশ্বাস দেয়—যখনই এই ধরিত্রীতে ধর্ম বিপন্ন হয়, অধর্ম মাথা তোলে, তখন ঈশ্বর নিজেই অবতরণ করেন। তিনি শুধুমাত্র দুষ্টকে দমন করেন না, তিনি ন্যায়পথে চলার অনুপ্রেরণা দেন, ন্যায়বানদের মনে সাহস যোগান।

এই যুগে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার—জীবন মানেই যুদ্ধ, আর যুদ্ধ মানেই কর্তব্য।
কর্তব্যের সনাতন পথেই নিহিত মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা।

তাই, ও মনুষ্য,
ভীত হয়ো না,
তর্ক নয়—চল, সত্যের পথে,
ধর্মের জন্য জাগো, দাঁড়াও, লড়ো।
ভগবান তোমার সাথে আছেন।
তুমি একা নও।
তুমি সনাতনের অংশ।
তুমি ইতিহাসের উত্তরাধিকার।
তুমি অর্জুন


श्रीमद्भगवद्गीता

ভগবদ্গীতা: এক সামরিক নির্দেশিকা ও যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা